logo
ads

পৃথিবীর সব পাখিই একই ধরনের ডাক ব্যবহার করে হুমকির সতর্কবার্তা দেয়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশকাল: ৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২২ পি.এম
পৃথিবীর সব পাখিই একই ধরনের ডাক ব্যবহার করে হুমকির সতর্কবার্তা দেয়

সংগৃহীত ছবি

ভাষা মানুষকে অনন্য করেছে—অমূর্ত বিষয় প্রকাশ, জটিল কাজের সমন্বয় ও যোগাযোগের বিস্ময়কর ক্ষমতা দিয়েছে। তবে গবেষকরা বলছেন, ভাষার এই বিশেষত্ব পুরোপুরি মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, পৃথিবীর নানা প্রান্তের একাধিক প্রজাতির পাখি একই ধরনের ডাক ব্যবহার করে হুমকির সতর্কবার্তা দেয়, বিশেষ করে যখন শত্রু হিসেবে হাজির হয় ‘ব্রুড প্যারাসাইট’ বা ডিম পরজীবী পাখি যেমন কোকিল।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়, স্পেনের ডোনানা বায়োলজিকাল স্টেশন, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের এই যৌথ গবেষণা নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, অন্তত ২১ প্রজাতির পাখি এমন একটি বিশেষ “কান্নার মতো” ডাক ব্যবহার করে, যা কেবল পরজীবী পাখি দেখলেই শোনা যায়।

ডিম পরজীবীর বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরক্ষা

কোকিলজাতীয় পরজীবী পাখিরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে এবং ফুঁটে ওঠা ছানারা প্রতিদ্বন্দ্বী ছানাদের ফেলে দিয়ে পুরো যত্ন নিজের করে নেয়। এতে মূল পাখির প্রজনন পুরোপুরি ব্যাহত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার সুপার্ব ফেয়ারি-রেন, আফ্রিকার টনি-ফ্লাঙ্কড প্রিনিয়া, এশিয়ার হিউম’স লিফ ওয়ার্বলার এবং ইউরোপের গ্রিনিশ ওয়ার্বলার—সবাই একই ধরনের ডাক ব্যবহার করে কোকিল বা অন্যান্য পরজীবীকে আক্রমণের সংকেত দেয়।

শুধু নিজের প্রজাতির সঙ্গীরা নয়, অন্য প্রজাতির পাখিরাও এই ডাক শুনে একসঙ্গে পরজীবীকে আক্রমণ করে। অর্থাৎ এটি এক ধরনের আন্তঃপ্রজাতি ভাষা, যা সহযোগিতামূলক প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করে।

পরীক্ষায় মিলেছে অভাবনীয় ফল

গবেষকরা অস্ট্রেলিয়া ও চীনে কোকিলের কৃত্রিম মডেল দেখিয়ে পরীক্ষা চালান। দেখা যায়, ফেয়ারি-রেন ও স্ক্রাবরেন পাখি কেবল কোকিল দেখলেই এই বিশেষ ডাক দেয় এবং আক্রমণ করে। অন্যান্য শত্রু প্রাণী সামনে আনলে তারা এমনটা করেনি।

আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো, চীনের পাখিরা অস্ট্রেলিয়ার ডাক শুনেও একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, যেন তারা আগে থেকেই এ সংকেত বোঝে।

ভাষার উৎসে নতুন আলো

চার্লস ডারউইন প্রায় দেড়শ বছর আগে বলেছিলেন, প্রাণীর সহজাত শব্দ নতুন প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করা ভাষার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে। এই গবেষণা সেই ধারণার পক্ষে নতুন প্রমাণ হাজির করেছে।

কারণ, এই বিশেষ পাখির ডাকের মধ্যে আছে দুটো দিক—একদিকে এটি সহজাত প্রতিক্রিয়া, অন্যদিকে এটি শিখে নিতে হয়। এভাবে এটি মানবভাষার মতো যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে প্রাণীজগতের ডাকের মধ্যে এক সেতুবন্ধন রচনা করে।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক রব ম্যাগ্রাথ বলছেন, “যেভাবে এই ডাক বাহ্যিক কোনো বিষয় বা ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, সেটি অনেকটা মানব ভাষার শব্দের মতো। ফলে বোঝা যাচ্ছে, প্রাণী ও মানুষের যোগাযোগ আসলে একই ধারাবাহিকতার অংশ।”

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ